মশার কামড়ে যেসব রোগ হয়

মশা অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি প্রাণী। কিন্তু এর মতো জ্বালাতনকারী পতঙ্গ হয়তো বিশ্বে আর নেই। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই পৃথিবীতে মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে ১০০ প্রজাতির মশা রোগ ছড়ায়। এডিস, এনোফিলিক্স ও কিউলেক্স এই তিন প্রজাতির মশা মানুষের জন্য বেশি ক্ষতিকর।

মশার কামড়ে যেসব রোগ হয়

মশার কামড়ে যেসব রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ডেঙ্গুজ্বর, চিকুনগুনিয়া,ম্যালেরিয়া, জিকা ভাইরাস, ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ ও ইয়োলো ফিভার বা পীতজ্বর। নিচে মশাবাহিত রোগ জীবাণু নিয়ে বিস্তারিত লেখা হলো।

মশাবাহিত ৮টি রোগ

মশার কামড়ে যেসব রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ডেঙ্গুজ্বর, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস।

১. ডেঙ্গুজ্বর

এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমে মানুষের দেহে ডেঙ্গুর ভাইরাস প্রবেশ করে। দক্ষিণ-আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের ১৪১ টি দেশে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। পুরো পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বাংলাদেশেও প্রতি বছর জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে এ পর্যন্ত (৩ ডিসেম্বর ২০২৪) ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ হাজার ৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৪৯৭ জন।

ডেঙ্গুজ্বর
ডেঙ্গুর উপসর্গ

ডেঙ্গুর কয়েকটি উপসর্গ হলো:

  • ১০১ থেকে ১০৫ ডিগ্রি জ্বর (জ্বর টানা থাকতে পারে আবার ঘাম দিয়ে ছেড়ে দেবার পর ফের আসতে পারে)
  • শরীরে ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • চামড়ায় লালচে দাগ (র‌্যাশ)
  • বমিভাব
  • মাথাঘোরা
২. ম্যালেরিয়া

স্ত্রী এনোফিলিসসহ বিশেষ চার প্রজাতির মশা রয়েছে যেগুলোর কামড়ে সাধারণত ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে। প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপারাম প্রজাতির কামড়ে সবচেয়ে মারাত্মক ম্যালেরিয়া হয়। মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে পুরোনো রোগ। খ্রিস্টপূর্বাব্দেও গ্রিস ও চীনে এ রোগের অস্তিত্ব ছিলো। প্রতি বছর বিশ্বে ২৮ কোটিরও বেশি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা এবং সীমান্তবর্তী ১৩ টি জেলাকে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি ঢাকা শহরেও ম্যালিরিয়ার অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকরা।

ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়ার উপসর্গ

ম্যালেরিয়ার বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে। কয়েকটি উপসর্গ হলো:

  • জ্বর ১০৪-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট
  • শরীরে প্রচন্ড ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • খিঁচুনি
  • তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব করা
  • অত্যধিক ঘাম হওয়া
  • ক্লান্তি-অবসাদ অনুভব করা
  • রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেওয়া
৩. চিকুনগুনিয়া

চিকনগুনিয়া একটি ভাইরাস। এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস এলবোপিকটাস মশার কামড়ে মানুষ এ জ্বরে আক্রান্ত হয়। ১৯৫২ সালে তানজানিয়ায় এ রোগের অস্তিত্ব প্রথম পাওয়া গেলেও, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ও ভারতীয় উপমহাদেশে এটি বেশি হয়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রথম চিকনগুনিয়া শনাক্ত হয়। এরপর ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে এবং ২০১৭ সালে পুরো বাংলাদেশেই এ রোগের কথা শোনা যায়।

চিকুনগুনিয়া
চিকনগুনিয়ার উপসর্গ

সাধারণত ৭২ থেকে ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে চিকনগুনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর তিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত উপসর্গগুলো থাকে:

  • মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
  • জয়েন্টে ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • ফুসকুড়ি (র‌্যাশ)
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া
  • রেট্রো-অরবিটাল বা চোখের পেছনে ব্যথা
  • বমিভাব
৪. জিকা ভাইরাস

এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়ায়। মশার কামড় ছাড়াও রক্ত পরিসঞ্চালন এবং অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এ রোগটি ছড়িয়ে থাকে। ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় জিকা ভাইরাস প্রথম বানরের শরীরে শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে পঞ্চাশের দশকে আফ্রিকার অনেক দেশে মানুষের শরীরেও এ জীবাণু পাওয়া যায়। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে জিকা ভাইরাস। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম এ ভাইরাস ধরা পড়ে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৫ জন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। গত বছরে (২০২৪) ৮ জন এ রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। জিকার দুটি ধরন রয়েছে। একটি হলো আফ্রিকান এবং অন্যটি এশিয়ান। বাংলাদেশে পাওয়া জিকা ভাইরাসের ধরন হলো এশিয়ান।

জিকা ভাইরাস
জিকা ভাইরাসের উপসর্গ

জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে সংক্রমিত হওয়ার ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে এ উপসর্গগুলো দেখা যেতে পারে:

  • হালকা জ্বর
  • শরীরে লালচে দানার মতো ছোপ (র‌্যাশ)
  • চোখ থেকে পানি পড়া
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া
  • মাংসপেশি ও গিঁটে ব্যথা
  • অবসাদ ও মাথাব্যথা
৫. ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ

মশার একটি প্রজাতির নাম হলো কিউলেক্স। এ প্রজাতির কামড়ে ফাইলেরিয়া ছড়ায়। অ্যানো ফিলিস ও এডিস মশার কামড়েও একজন মানুষ ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রোগটি বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশের ৩৪ টি জেলায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ফাইলেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পা ও পায়ের চামড়া হাতির পায়ের মতো মোটা হয়ে যায়। এজন্য এটিকে এলিফ্যানটিয়াসিসও বলা হয়।

ফাইলেরিয়া
ফাইলেরিয়ার উপসর্গ

ফাইলেরিয়া আক্রান্ত হলে অল্পমাত্রার জ্বর হতে পারে। রোগটির রয়েছে আরও কিছু লক্ষণ:

  • লিম্ফনালীতে ব্যথা হওয়া এবং ফুলে যাওয়া
  • পা ফুলে যাওয়া
  • অন্ডকোষে ব্যথা হওয়া এবং ফুলে যাওয়া
  • অল্পমাত্রার জ্বর
৬. ইয়েলো ফিভার/পীত জ্বর

এডিস মশার হিমাগোগাস প্রজাতির কামড়ে পীত জ্বর হয়ে থাকে। এশিয়ায় এ রোগটি এখনো শনাক্ত করা যায়নি। প্রতি বছর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পীত জ্বরে প্রায় ২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় এবং কমবেশি ৩০ হাজার মারা যায়। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। তবে মারাত্মক রূপ ধারণ করলে কিছু লক্ষণ দেখে বুঝা যায় যে, পীত জ্বর হয়েছে।

ইয়েলো ফিভার
পীত জ্বরের লক্ষণ

পীত জ্বর হলে চোখে হলদে ভাব আসে, দেখে মনে হয় জন্ডিস হয়েছে। তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখে পীত জ্বরের বিষয়টি বুঝা যায়:

  • ত্বক ও চোখে হলদে ভাব
  • মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • কাঁপুনি
  • পিঠেব্যথা
  • বমিভাব
  • নাক ও মুখ থেকে রক্ত বের হওয়া
  • একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া
৭. সিন্ডবিস

সিন্ডবিস (SINV) একটি ভাইরাস। ১৯৫২ সালে এই ভাইরাসটি প্রথম মিশরের কায়রোতে শনাক্ত করা হয়। অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও রাশিয়ায় এই রোগটি দেখা যায়। কিউলেক্স ও কিউলিসেটা মশার মাধ্যমে ভাইরাসটি মানবদেহে ছড়ায়। সিন্ডবিসে আক্রান্ত হলে শরীরে তীব্র জ্বর আসে এবং মস্তিষ্কে প্রদাহ দেখা দেয়।

সিন্ডবিস
সিন্ডবিসের উপসর্গ

সিন্ডবিস হলে ভয়ের কিছু নেই। দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর এ রোগ সেরে যায়। কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলো দেখে সিন্ডবিস ধারণা করা যায়:

  • তীব্র জ্বর
  • মস্তিষ্কে প্রদাহ
  • হাড়ের সংযোগে প্রদাহ
৮. লাইশম্যানিয়াসিস/কালা জ্বর

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে ৩০ ধরনের ভিন্ন প্রজাতির লাইশম্যানিয়াসিস জীবাণু আছে। এর মধ্যে ১০ টি জীবাণু মানবদেহে রোগ ছড়ায়। গর্ভবতী নারী মশাদের মাধ্যমে এ জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি প্রাণঘাতী একটি রোগ। প্রতি বছর কালা জ্বরে বিশ্বে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। তবে বাংলাদেশ বিশ্বের একমাত্র দেশ, যারা কালা জ্বর শতভাগ নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে।

লাইশম্যানিয়াসিস
লাইশম্যানিয়াসিসের উপসর্গ

জ্বরে আক্রান্ত রোগীর যেসব উপসর্গ দেখলে ধারণা করা হয় যে, ল্যাইশম্যানিয়াসিস হয়েছে:

  • হালকা বা তীব্র জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • ওজন হ্রাস
  • অবসাদ
  • চামড়া কালো হয়ে যাওয়া
  • যকৃৎ ও প্লীহার আকার বৃদ্ধি

মশাবাহিত রোগের চিকিৎসা

মশাবাহিত যে কোনো রোগে আক্রান্ত হলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। মেডিকেল সহকারী বা ঔষধ বিক্রেতার থেকে পরামর্শ না নেওয়া এবং তাদের দেওয়া ঔষধ সেবন না করা। তীব্র জ্বর হলে এবং শরীরে অস্বাভাবিক কোনো লক্ষণ দেখা গেলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। এছাড়াও সাধারণ কিছু নিয়ম রয়েছে, যা মানুষকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে:

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
  • তরল খাবার খাওয়া
  • ভিটামিন-সি খাওয়া
  • মশারি টানানো
  • বাসা-বাড়ির ভেতর ও চারপাশে পরিচ্ছন্ন রাখা
  • মশার স্প্রে করা
  • জমে থাকা পানি ৩দিনে একবার ফেলে দেওয়া
শেষ কথা

পেস্ট কন্ট্রোল বাংলাদেশ দেশের স্বনামধন্য একটি পোকামাকড় নির্মূলকারী প্রতিষ্ঠান। আমরা মশাবাহিত রোগ থেকে মানুষকে সুস্থ রাখতে নিখুঁতভাবে মশা নির্মূল করে থাকি। এছাড়াও ইঁদুর, তেলাপোকা, উইপোকা ও ছারপোকা দমন করে আরামদায়ক পরিবেশে মানুষকে বাস করার সুযোগ তৈরি করে দেই। আপনি কি মশাবাহিত রোগ থেকে সুস্থ থাকতে এবং পরিবারকে সুস্থ রাখতে চাচ্ছেন? তাহলে এখনই কল করুন +8801713-155200

সেবা পেতে যোগাযোগ করুন
FAQ's

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তরসমূহ

আপনারা কী কী পরিষেবা প্রদান করেন?

আমরা মশা, ইঁদুর, তেলাপোকা, ছারপোকা ও উইপোকা নির্মূল করে থাকি। পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের যেন ক্ষতি না হয়, বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করি।

আপনাদের পরিষেবার খরচ সম্পর্কে কীভাবে জানতে পারি?

আমাদের পরিষেবার খরচগুলো সেবা গ্রহীতার চাহিদার উপর নির্ভরশীল। একজন সেবা গ্রহীতা যখন তার চাহিদাগুলো আমাদের বলেন, আমরা তখন তাকে খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দেই। এই নাম্বারে ফোন করে আপনার প্রয়োজন ও চাহিদাগুলো আমাদের বলুন +8801713-155200

আপনাদের পরিষেবা নেওয়ার জন্য কীভাবে যোগাযোগ করবো?

আমরা মশা, ইঁদুর, ছাড়পোকা ও পিঁপড়া নির্মূল পরিষেবা প্রদান করি। আমাদের পরিষেবাগুলো পেতে ফোন করুন এই নাম্বারে +8801713-155200

আপনারা কী বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে সেবা প্রদান করেন?

+8801713-155200 এটি আমাদের হটলাইন নাম্বার। এ নাম্বারে ফোন করলে, আমাদের কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি বিস্তারিত জানিয়ে দেবে।

Other pages you may be interested in...

Need fast and effective mice removal service in Bangladesh? Learn how expert pest control can eliminate mice safely and prevent future infestations.

Discover the latest mosquito spray prices in Bangladesh. Shop effective insecticide sprays for home use at affordable rates.

Learn about common household pests in Bangladesh, including ants, cockroaches, mosquitoes, rodents, and more. Discover effective prevention and control Tips.

Arrow