বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ পোকামাকড় বৃদ্ধির জন্য অনুকূল। শহর বা
গ্রাম, গরমকাল কিংবা বর্ষা—প্রায় সব সময়ই আমরা তেলাপোকা, ছারপোকা,
মশা, মাছি, উইপোকা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব অনুভব করি। এগুলো
শুধু অস্বস্তিকরই নয়, বরং বিভিন্ন রোগ জীবাণুর কারণও হতে পারে। তাই ঘর
বা অফিসকে নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রয়োজন সঠিক কৌশলে পোকামাকড়
নিয়ন্ত্রণ করা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম কৌশল কোনটি? এই
ব্লগে আমরা সহজ, নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী কিছু কৌশল আলোচনা করব, যা
আপনাকে পোকামাকড়মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
সাধারনত একেক অঞ্চলে একেক ধরনের পোকামাকড়ের উপদ্রব হয়ে থাকে। এদেশের
আবহাওয়ার সাথে বেশ কিছু ক্ষতিকর পোকামাকড় জন্মে থাকে। এসব পোকামাকড়ের
জ্বালাতন থেকে বাসা কিংবা অফিস কোনটা থেকেই আমরা রেহাই পাই না। কিছু
পোকামাকড় বাসা বাড়িতে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবার কিছু পোকামাকড়
অফিস আদালতে প্রাধান্য বিস্তার করে। নিম্নে কিছু পোকামাকড়ের ক্ষতিকর
প্রভাবসহ বর্ণনা দেয়া হল:
মশা
মশা একটি অতি পরিচিত ও বিরক্তিকর কীট।
বাংলাদেশের সর্বত্র এদের দেখা পাওয়া যায়। বর্ষাকালে মশার প্রকোপ বেড়ে
যায়। বর্তমান বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭ লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়
মশাবাহিত রোগের কারনে। বিভিন্ন ধরণের মশা ভিন্ন ভিন্ন রোগের কারন।
নিম্নে উল্লেখ করা হল:
বাহিত রোগ:
এডিস মশা: এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে
আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ
মারা যায়।
এনোফিলিস মশা: এই মশার ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে,
ম্যালেরিয়াতে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ মারা যায়।
কিউলেক্স: কিউলেক্স মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া ও এনসেফালাইটিস হয়।
তেলাপোকা
তেলাপোকা অত্যন্ত পরিচিত ও মারাত্মক
ক্ষতিকর পোকা। বাসা-বাড়ি বা অফিস পাড়ায় সর্বত্র এই ক্ষতিকর পোকার দেখা
পাওয়া যায়। তেলাপোকা বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও
পরজীবী বহন করে যা বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের কারন।
বাহিত রোগ:
ডায়রিয়া
আমাশয়
কলেরা
টাইফয়েড
অ্যালার্জি
হাঁপানি
খাদ্য বিষক্রিয়া
তেলাপোকার সংস্পর্শে শিশুরা অ্যালার্জি ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার
ঝুঁকি বেশি।
ছারপোকা
এটি এক ধরণের রক্তচোষা বিরক্তিকর পোকা যা মানুষের ঘর বাড়িতে মানুষের
সাথেই বসবাস করে ও সুযোগ পেলেই কামড়ায় বিশেষ করে রাতের বেলায়।
ছারপোকা এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি
করেছে।
বাহিত রোগ:
অ্যালার্জি
ফোস্কা ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে।
কখন কখনো বাচ্চাদের রক্তশূন্যতাও হতে পারে।
বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টও হতে পারে।
উইপোকা
উইপোকা এমন একটি পোকা যা কাঠ, কাগজ ও উদ্ভিজ্জ
পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা কাঠের আসবাবপত্র ও বাড়ি ঘরের জন্য
মারাত্মক ক্ষতিকর।
উইপোকার আক্রমণের লক্ষণ সমুহ:
ফাঁপা কাঠ: কাঠের ভেতর সুড়ঙ্গ তৈরি করে ফোকলা করে দেয়।
মাটির টিউব: দেয়াল বা কাঠের গোড়ায় ০.৫-২.৫ সেমি পুরু কাদার
নালি দেখা যায়।
উড়ন্ত উইপোকা: বর্ষার শুরুতে ডানাওয়ালা উইপোকা ঝাঁকে ঝাঁকে
বের হয়।
ফ্রাস (মল): কাঠের গুঁড়ো বা গোলাকার দানার মতো মল জমে।
উইপোকার ক্ষতিকর প্রভাব
গৃহস্থালির ক্ষতি: কাঠ, বেত ও বাশের তৈরি আসবাবপত্র ধ্বংস
করে।
কৃষি ক্ষেত্রে ক্ষতি: বিভিন্ন শাকসবজি ও ফসলি গাছের শিকর ও
কাণ্ড ক্ষয়ের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদনের ক্ষতি করে।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: বাংলাদেশে উইপোকার কারনে কয়েকশত কোটি টাকার ফসল ধ্বংস হয় বলে কৃষিবিদদের ধারনা।
ছুঁচো
ছুঁচো ইঁদুর জাতীয় একধরনের ছোট স্তন্যপায়ী
প্রাণী যা আমাদের ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত এবং খাবারের মজুদের জন্য
মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি খাবার ও পোশাক নষ্ট করে, বৈদ্যতিক তার কেটে কখনো
কখনো মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
বাহিত রোগ:
সালমোনেলা
প্লেগ
টাইফয়েড
লেপ্টোস্পাইরোসিস
হান্টাভাইরাস
ল্যাসা জ্বর
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন কৌশল
পোকামাকড় বর্তমানে একটা বিরক্তিকর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিম্নে
বিভিন্ন পোকামাকড় নিয়ন্ত্রনের জন্য কিছু কার্যকরী ও যুগোপযোগী কৌশল
সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
"প্রতিরোধই প্রতিকারের চেয়ে ভালো" — এই কথাটি পোকা নিয়ন্ত্রণে শতভাগ
সত্য।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন:
খাবার খাওয়ার পরপরই মেঝে ও টেবিল পরিষ্কার করুন।
ময়লা বা বর্জ্য নিয়মিত নির্ধারিত স্থানে ফেলুন।
রান্নাঘরের সিঙ্কে পানি জমে থাকতে দেবেন না।
ফাটল, ছিদ্র, জানালার ফাঁক দিয়ে পোকা ঢোকে—সেগুলো বন্ধ করুন।
রাতের বেলা সব খাবার ঢেকে রাখুন এবং আবর্জনার ঝুড়ি ঢাকনা দিয়ে আবৃত
রাখুন।
প্রাকৃতিক উপায়ে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ
অনেকেই কেমিক্যাল ব্যবহারে দ্বিধায় থাকেন, বিশেষ করে শিশু ও পোষা
প্রাণী থাকার কারণে। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কৌশল হতে পারে আদর্শ সমাধান।
জনপ্রিয় প্রাকৃতিক কৌশল:
তেজপাতা ও লবঙ্গ: তেলাপোকা দূর করতে রান্নাঘরের কোণায়
তেজপাতা ও লবঙ্গ রেখে দিন।
লেবুর রস ও ভিনেগার: ছারপোকা ও ছোট পোকামাকড় দূর করতে মিশ্রণ
তৈরি করে স্প্রে করুন।
পুদিনা তেল ও ইউক্যালিপটাস তেল: এই তেলের গন্ধ মশা ও কিছু
কীটপতঙ্গ প্রতিহত করে।
বোরিক অ্যাসিড ও চিনি: তেলাপোকার জন্য বিষাক্ত ফাঁদ।
সুবিধা:
পরিবেশবান্ধব
স্বাস্থ্যঝুঁকি কম
স্বল্প খরচে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান
কেমিক্যাল ও স্প্রে ব্যবহার
যদি পোকামাকড়ের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে প্রাকৃতিক উপায় যথেষ্ট নাও
হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পাওয়া স্প্রে ও কেমিক্যাল ব্যবহার
করে তাত্ক্ষণিক সমাধান পাওয়া সম্ভব।
কিছু কার্যকর পণ্য:
ককরোচ জেল: তেলাপোকার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত কাজ করে
বেড বাগ স্প্রে: ছারপোকার উপদ্রব কমাতে নির্ভরযোগ্য
মসকুইটো কিলার স্প্রে: মশা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কাজ করে
টারমাইট কন্ট্রোল লিকুইড: উইপোকা থেকে কাঠ ও আসবাব রক্ষা করে
ব্যবহারের সময় অবশ্যই নিরাপত্তাবিধি মেনে চলতে হবে। শিশু ও গৃহপালিত
প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
নিয়মিত মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে উপেক্ষিত কিন্তু এটাই সবচেয়ে জরুরি
কৌশল, তা হলো নিয়মিত মনিটরিং ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
বাংলাদেশের আবহাওয়া পোকামাকড়ের বংশবিস্তারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন কৌশল দেশে প্রচলিত থাকলেও কোনটাই
দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকরী সুফল দেয়না। যদি ঘরে বা অফিসে পোকামাকড়ের
উপদ্রব খুব বেশি হয়ে থাকে, তাহলে একমাত্র কার্যকর সমাধান হলো পেশাদার
পেস্ট কন্ট্রোল সেবা নেওয়া।
কিভাবে কাজ করে:
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পরিবেশবান্ধব কেমিক্যাল ব্যবহার।
বাড়ির প্রতিটি কোণে গভীর পর্যবেক্ষণ করে লার্ভা, বাসা উৎস চিহ্নিত
করে ক্যামিক্যাল প্রয়োগ।
টারমাইট ব্যারিয়ার, জেল বাইটিং, হিট ট্রিটমেন্ট সহ বিভিন্ন উন্নত
পদ্ধতি প্রয়োগ।
ঢাকা শহরে এখন অনেক পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি রয়েছে যারা বাসা-বাড়ি, অফিস, হোটেল, গুদামসহ সব ধরনের জায়গায়
পেশাদার সেবা দিয়ে থাকে। পেস্ট কন্ট্রোল বাংলাদেশ, পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের জগতে একটি
বিশ্বস্ত নাম। আমাদের সেবার মান অত্যন্ত উন্নত। আপনার বাসা, অফিস বা প্রতিষ্ঠানকে পোকামাকড় মুক্ত করতে চাইলে
নির্দ্বিধায় পেস্ট কন্ট্রোল বাংলাদেশ এর সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের কৌশল সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ
পোকামাকড় তাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় কি?
পোকামাকড় দূরে রাখতে লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে ঘরের কোণায় রাখুন, আর
মাঝে মাঝে ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে স্প্রে করুন। পুদিনা ও তুলসি
পাতার ঘ্রাণ অনেক পোকামাকড়ই সহ্য করতে পারেনা, তাই দরজা বা
জানালার পাশে পুদিনা ও তুলসি গাছ লাগান।
কীটনাশক ব্যবহারে কোন কোন দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন?
কীটনাশক স্প্রে করার সময় মাস্ক পরুন, বাচ্চা ও পোষা প্রাণীর
নাগালের বাইরে রাখুন, আর প্রয়োগ শেষে কিছুক্ষণ ওই জায়গায় না
যাওয়াই ভালো।
বাংলাদেশে কোন পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস সবচেয়ে সেরা?
পেস্ট কন্ট্রোল বাংলাদেশ পোকামাকড় দমনে অনন্য। তাদের
সেবার মান, বিশ্বস্ততা, পেশাদারিত্ব পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের
জগতে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে।
অনেক চেষ্টা করেও পোকামাকড় কেন দূর হচ্ছে না?
অনেক সময় আমরা কেবল বাইরে থেকে স্প্রে করি, কিন্তু ভিতরের
লার্ভা বা বাসার উৎস খুঁজে ধ্বংস না করলে পোকা আবার ফিরে আসে।
তাই লার্ভা বা বাসা সহ ধ্বংস করলে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া যাবে।
অত্যন্ত জরুরি। ময়লা ও অগোছালো পরিবেশ পোকামাকড়ের আবাসস্থল
হয়ে ওঠে। তাই নিয়মিত জামা কাপড় হতে শুরু করে গৃহস্থালির
সবকিছু, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র সবকিছ পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন করলেই বেশীরভাগ পোকামাকড় থেকে মুক্ত থাকা যায়।