চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে করণীয়

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত এডিস প্রজাতির মশার মাধ্যমে মানবদেহে ছড়ায়। এ রোগের প্রধান উপসর্গ হলো উচ্চমাত্রার জ্বর এবং অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা। যদিও এটি প্রাণঘাতী নয়, তবে রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে। সঠিক সচেতনতা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে করণীয়

চিকুনগুনিয়া কী?

চিকুনগুনিয়া (Chikungunya) হলো একটি RNA ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ যা মশাবাহিত ভাইরাস হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti) এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস (Aedes albopictus) মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মশা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পান করার পর যদি সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দেয়, তাহলে ভাইরাসটি তার দেহে প্রবেশ করে।

এই রোগটি ১৯৫২ সালে প্রথম শনাক্ত হয় তানজানিয়ায়। “চিকুনগুনিয়া” শব্দটি এসেছে কিমাকোন্ডে ভাষা থেকে, যার অর্থ—"কুঁজো হয়ে হাঁটা"—এটি রোগীদের ব্যথার কারণে অস্বাভাবিক হাঁটার ভঙ্গিকে বোঝায়। এডিস, এনোফিলিক্সকিউলেক্স এই তিন প্রজাতির মশা মানুষের জন্য বেশি ক্ষতিকর। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এই ব্লগটি পড়ুন - মশার কামড়ে যেসব রোগ হয়

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ কী কী?

চিকুনগুনিয়া সাধারণত সংক্রমণের ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ করে। সাধারণত উপসর্গ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চলে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে জয়েন্টে ব্যথা কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে স্থায়ী থাকতে পারে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে। শিশু ও বয়স্কদের সংক্রমণ জটিল হওয়ার ঝুঁকি বেশি। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। চিকুনগুনিয়া লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

  • উচ্চমাত্রার জ্বর (১০২°F বা তার বেশি)
  • অস্থিসন্ধি ও পেশিতে তীব্র ব্যথা
  • মাথাব্যথা ও চোখে চাপ অনুভব
  • বমি বমি ভাব বা বমি
  • ত্বকে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি
  • চোখ লাল হওয়া বা ফোলা
  • চরম ক্লান্তি ও দুর্বলতা

কিভাবে চিকুনগুনিয়া এড়ানো যায় (প্রতিরোধ)

চিকুনগুনিয়ার কোনো টিকা বা নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তাই এর প্রতিরোধই প্রধান কৌশল। মশার বিস্তার রোধ এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখার কিছু কার্যকর উপায় হলো:

  • জমে থাকা পানি (ডাবের খোসা, ফুলদানি, টায়ার, প্লাস্টিক কনটেইনার ইত্যাদি) পরিষ্কার করে ফেলা
  • দিনে এবং রাতে মশা তাড়ানোর ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা
  • মশারী ব্যবহার করে ঘুমানো
  • জানালা ও দরজায় জাল লাগানো
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা
  • শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ সুরক্ষায় রাখা
কিভাবে চিকুনগুনিয়া এড়ানো যায়?

চিকুনগুনিয়ার প্রতিকার ও চিকিৎসা

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত হওয়ায় এটির নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণ উপশমে নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:

  • প্যারাসিটামল সেবন করে জ্বর ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা (অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন এড়ানো উচিত)
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং ঘন ঘন তরল গ্রহণ করা
  • হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া
  • গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য
  • দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থাকলে রিউমাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া

চিকুনগুনিয়া জ্বর পরীক্ষা ও ফলাফল

গত বছর এডিস মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ায় ৬৭ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চিকুনগুনিয়া সনাক্ত করতে নিচের পরীক্ষা করা হয়:

  1. ELISA (Enzyme-linked Immunosorbent Assay): এই পরীক্ষায় IgM ও IgG অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যায়।
  2. RT-PCR (Reverse Transcription Polymerase Chain Reaction): ভাইরাসের RNA শনাক্ত করে নিশ্চিত করে সংক্রমণ হয়েছে কি না।
চিকুনগুনিয়া জ্বর পরীক্ষা
ফলাফল মূল্যায়ন
উপাদান পরিসর ব্যাখ্যা
চিকুনগুনিয়া আইজিজি অ্যান্টিবডি / চিকুনগুনিয়া আইজিএম অ্যান্টিবডি 0.80 এবং 1.09 এর মধ্যে চিকুনগুনিয়া বিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে, পরীক্ষা 1-2 সপ্তাহের মধ্যে পুনরাবৃত্তি করা উচিত।
> 1.10 নিশ্চিতভাবে চিকুনগুনিয়া বিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্দেশ করে, যা অতীত বা বর্তমান সংক্রমণের কারণে হতে পারে।

সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও ফলাফল মূল্যায়নের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় সহজ হয়।

চিকুনগুনিয়া হলে কী করা উচিত এবং উচিত নয়

চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হলে সচেতনভাবে কিছু বিষয় মেনে চলা খুবই জরুরি। সঠিক আচরণ ও ভুল এড়িয়ে চলার মাধ্যমে দ্রুত সুস্থতা লাভ সম্ভব। নিচে কী করা উচিত এবং কী এড়ানো উচিত তা তুলে ধরা হলো।

যা করা উচিত:
  • বিশ্রাম নেওয়া ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ
  • বেশি করে পানি ও তরল পান
  • ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন
  • ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা
যা এড়ানো উচিত:
  • নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা
  • প্রচণ্ড ব্যথা সহ্য করে কাজ চালিয়ে যাওয়া
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ
  • আক্রান্ত অবস্থায় বাইরে ঘোরাফেরা করা

শেষ কথা

চিকুনগুনিয়া একটি বিরক্তিকর কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সঠিক সতর্কতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রেখে আমরা এর বিস্তার রোধ করতে পারি। ঘর এবং আশপাশে মশার উৎপাত থাকলে অবহেলা না করে তা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বাসা ও অফিস মশামুক্ত রাখতে পারলে চিকুনগুনিয়া প্রকোপ কমানো সম্ভব।

পেস্ট কন্ট্রোল বাংলাদেশ দেশের শীর্ষ পেস্ট কন্ট্রোল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বাসাবাড়ি ও অফিস এবং এগুলোর চারপাশ থেকে নিখুঁতভাবে মশা নির্মূল করে। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তেলাপোকা, ইঁদুর, উইপোকাছারপোকা নির্মূল করে আপনার চারপাশকে নিরাপদ করে তুলি।

সেবা নিতে কল করুন: +8801713-155200

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

চিকুনগুনিয়া কি ডেঙ্গুর মতোই বিপজ্জনক?

চিকুনগুনিয়া ডেঙ্গুর মতোই মশাবাহিত হলেও এটি সাধারণত প্রাণঘাতী নয়। তবে অস্থিসন্ধির ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা রোগীর জীবনে ভোগান্তি ডেকে আনতে পারে।

চিকুনগুনিয়া ছড়ানোর মৌসুম কখন?

বর্ষাকাল ও বর্ষার পরে এই রোগ বেশি দেখা যায়, কারণ এ সময় মশার প্রজনন বৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

একবার চিকুনগুনিয়া হলে আবারও হতে পারে কি?

সাধারণত একবার আক্রান্ত হলে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। তবে ভাইরাসের ভিন্ন স্ট্রেইনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

গর্ভবতী নারীরা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে কী করা উচিত?

দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ সংক্রমণ গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে

চিকুনগুনিয়া থেকে সুস্থ হতে কতদিন লাগে?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৭-১০ দিনের মধ্যে উপসর্গ চলে যায়। তবে জয়েন্ট ব্যথা বা দুর্বলতা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

Arrow